নতুন গল্প
ঘরটা ঘর নয়। ঘরের থেকে বড্ড বেশি ছোটো। মানুষের মাথায় ঠেকে চাল। এত্তো জিনিসে ঠাসা। অনেক চকচকে শাড়ি, ভাঙা আয়না, স্টোভ। গুমোট। অথচ এসব ভালোলাগছিল ঐত্রাসের। কারণ মেয়েটা মোহময়। মেয়েটা অদ্ভুত। নেশার ঘোরে এমনিই এপাড়ায় বেড়াতে এসেছিল ওরা কয়েকজন। ডাক্তার মানুষ। হঠাৎ নেশা, হঠাৎ এই পাড়ায় এসে পড়া। ভাবেনি যে কারো ঘরে এসে ঢুকবে। ওর মতো সম্ভ্রান্ত বাড়ির ছেলের এরকম আচরণ মানায় না। অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। ডাকছিল, যেরকম সাধারণত ডেকে থাকে। শুভঙ্কর একজন কাকিমা গোছের সঙ্গে কোনো একটা ঘরে ঢুকে যাওয়ায় ঘাবড়ে গিয়েছিল সবাই। তারপরে সবাই কারোর না কারোর সাথে ঘরে ঢুকে গেল। ঐত্রাস দেখেছিল এই মেয়েটাকে। অন্য সবার মতো সং সেজে দাঁড়ায়নি সে। স্বাভাবিক সৌন্দর্যের দীপ্তি ছিল চেহারায়। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই যান্ত্রিকভাবে মেয়েটা হাত ধরে নিয়ে এল ঘরে। বারণ করতে ইচ্ছে করেনি ঐত্রাসের।
মিঠে একটা গন্ধ ছিল ঘরটায়। নোংরা বিছানা বালিশ। ঘরে ঢুকে খাটে বসল। স্থির হয়ে। মেয়েটা চাবি দেওয়া যন্ত্রের মতো নিজের গায়ের জামাকাপড় ছেড়ে ফেলে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও তাকিয়ে দেখল মেয়েটার অমলিন নগ্নতাকে। কিন্তু তার শরীর অনেক দাগ, কালসিটে ইত্যাদি। অনেকক্ষণ ওইরকম ভাবেই কেটে যাবার পর মেয়েটা নিজে থেকেই কাছে এগিয়ে আসতে ও বলল, কিছু করতে হবে না। পাশে এসে শুয়ে থাকো। মেয়েটা কথা শুনে বাঁকা হেসে পাশে শুয়ে পড়ল।
আধবসা অবস্থায় ঐত্রাস ভাবছিল, পারছিল না ঠিক ভাবতে। মাথায় ভাবনাগুলো জট পেকে যাচ্ছিল। ভাবছিল এসব কী করছে। তারপর ভাবছিল কিছুই তো করেনি। ভাবছিল কুয়াশা জানতে পারলে রাগ করবে কিনা। ভাবছিল কুয়াশা জানতে পারবে কিনা। ওহ্ ! হঠাৎ মনে পড়ল। পাশে এক নগ্নিকা শয্যাশায়ী। তাকে ও চেনে না। তাতে কি ! এটা ওদের ব্যাবসা। কিন্তু ঐত্রাসের কী ?
জানলা দিয়ে রাস্তার আলো এসে পড়ছিল ঘরের ভিতরটায়। ঐত্রাস সাত পাঁচ না ভেবে শুয়ে পড়ল নগ্নিকার পাশে। জিজ্ঞেস করল, নাম কী ? উত্তর এল, চুমকি। বাজে লাগল নিজের নামটা শুনে। পাশের কোনো ঘর থেকে একটা অস্পষ্ট শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেটা সোহাগের না যাতনার বোঝার উপায় নেই। অনেকক্ষণ একঘেয়ে শব্দ। মেয়েটা নীরবতা ভেঙে প্রশ্ন করল, বউয়ের সাতে ঝগড়া করে এসেচিস ?
- বউ নেই।
- অ! তবে পিরীতের মেয়েছেলের সাতে ঝগড়া।
- চুপ করবে? কি ভাষা বলছ এসব ! মেয়েছেলে আবার কি কথা !
আবার নিস্তব্ধতা। পাশের অস্পষ্ট শব্দটা স্পষ্টতর হতে থাকে। কতগুলো নিকৃষ্ট মানের কথা শোনা যাচ্ছে পরিষ্কার। মেয়েটা বলে, তোদের অনেক পয়সা বল্ ? তাই ওমনি ওমনি এখানে এসেচিস। তুই ভালো বটে। এমনি যা পয়সা দেয় তাতে সরীরটায় কিচু থাকেনে। ঐত্রাস ধমকে বলল, বাজে কথা বোলো না। বলে ভাবল, মেয়েটার কী দোষ। ও এতেই অভ্যস্ত। বলল, তুমি কত টাকা পাও ? উত্তর এল, এমনিতে হাজার। আর খোদ্দের খুসি হয়ে হাতে কিচু দিলে . . .
কেমন গা গুলোচ্ছে। দম আটকে আসছে। নেশা কেটে যাচ্ছে এসব কথা শুনে। কথার মোড় ফেরাবার জন্য ঐত্রাস বলল, তুমি কখনো দেখেছ, আকাশ থেকে ইলিশ মাছ ঝরে পড়ছে ? কুয়াশাকেও এই প্রশ্নটা করেছিল ঐত্রাস। প্রত্যুত্তর এসেছিল, তোর একজন মনোবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া দরকার। মেয়েটাও ওরকমই বলবে। কেউ আকাশ থেকে ইলিশ ঝরতে দেখে না। ঐত্রাসের কী ডাঃ গুপ্তর কাছে একবার যাওয়া উচিৎ ? মেয়েটা এবারে উত্তর দিল, হ্যাঁ। চমকে উঠল ও। বলল, সত্যি বলছ ? মেয়েটা বলে, হুঁ, দেকি তো।ও বলল, আমিও। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে না। তুমি ঠাট্টা করছ না তো ?
-আমি আকাশ থেকে অনেক কিচু ঝরতে দেকেচি। গেলোবার বিস্টিকালে দেকেছিলাম, কত রসোগোল্লা আর খেলামবাটি ঝচ্চে। তা ওই তো খেয়ালে দেকি আর হারায় যায়।
হঠাৎ করেই অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে নিজের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে শুল ঐত্রাস। ভালোলাগছে ওর। ওর মতো মেয়েটা আকাশ থেকে জিনিস ঝরতে দেখে। মেয়েটাও সাহস পেয়ে ওর বুকের কাছে মাথা রাখে। বলে, তুই কি সারারাত গজালি করবি বলে পয়সা দিয়ে ঘরকে এলি ?
- গজালি মানে?
- ই যে ইদিক উদিক কার কতা।
- সবসময় ভালোলাগে ?
- ভালো লাগার সঙ্গে সঙ্ কী রে ? তুই খাওয়াবি নাকি ?
বিরক্ত হয়ে সরে পাশ ফিরে শুল ঐত্রাস। এদের সেই এক গল্প। বিরক্তিকর ! মেয়েটা বলল, সরিস যে বড় !
- আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারব না। বিয়ে টিয়ে করতে পারব না। নেশা কেটে গেলে চলে যাবো। ভুলে যাব। তুমি আমার মতো আকাশ থেকে জিনিস ঝরতে দেখ বললে বলে ভালোলাগল। এর থেকে বেশি কিছু সামর্থ্য নেই আমার।
- তোকে ইসব আমি বলেচি ? যবে থিকে ই কাজ করি কখোনো কেউ ইমনি আসে নাই। তোকে ভাল্লাগছে বলে না তোর সাতে ইমনি পড়ে আচি। সোমোয় অনেক পয়সা দাম দিয়ে কিনে লোকে জানিস ? তুই পয়সা দিয়ে বকচিস তো তাজ্জব লাগচে। তুই ভালো লোক।
- জানি।
- তো ইখানে কেনো এলি ? তোর মেয়েছেলে ঘরে ঢুকতে দেইনি ?
ঐত্রাসের হঠাৎ কুয়াশার মুখটা মনে পড়ল। সেদিন ফ্ল্যাটে পিছন থেকে এসে কুয়াশা ওকে জড়িয়ে ধরেছিল। তারপর রেশমের কাপড় আর ঘামের সিক্ততা। তারপরে কফি আর সিগারেটের গন্ধ। তারপর আর কিছু মনে নেই।
ঐত্রাস বলল, আমার প্রেমিকা আমাকে কতো ভালোবাসে জানো ? কিন্তু মাঝেমাঝে আমাকে বুঝতে পারে না। আমি বোধহয় বোঝার মতো নইও। আমি কবিতা লিখতে পারি না। চাইও না। আমি চাই একদিন আকাশ থেকে ইলিশ মাছ ঝরুক। আর ও আমার মতোই দেখতে পা। ব্যাস।
- পাবে।
- তুমি কী করে জানলে ?
- আমিও তো পাই।
- উহুঁ। তা বটে।
নেশা বেশ অনেকটা কেটে গেছে। শুভঙ্কর হাতে যেখানে ধাক্কা মেরেছিল তার ওপরে চুমকি শুয়ে আছে। ব্যথাটা এতক্ষণ বাদে টের পাচ্ছে ঐত্রাস। চুমকির ভিজে ঠান্ডা পিঠটা ঠেকছে ওর হাতে। ও এবারে উঠে যেতে চায়। এরকম একটা জায়গায় এরকম ভাবে . . .
চুমকি বলে, যা তুই। সোমোয় সেস হোয় গেচে। ইখুনি রঙ্গাদা তোকে বের কোরতে আসবে।
- তোমার ঘরে আবার কেউ আসবে বুঝি।
- এইতো বাজার। আসবেনা কেনে।
- ওহ্ !
পাশের ঘরের কদর্য শরীরমর্দনের শেষের ক্লান্ত গোঙানি শোনা যাচ্ছে। ঐত্রাস চুমকিকে সরিয়ে দেয়। উঠে পড়ে। একটুও নেশা বাকি নেই। আবার অস্বস্তি হয় ওর। বলে, কাপড় পরো।
- পরি। বলে পাতলা ফিনফিনে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নেয় চুমকি। ঘরের দরজাটা খুলতে গিয়ে পিছনে ফিরে একবার ঐত্রাসকে জড়িয়ে ধরে। ঐত্রাসও জড়ায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে, ভালো হোক তোর। দরজা খুলে দিয়ে বল , যা। আর আসিস নি।
ঐত্রাস দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। একবারও তাকায় না পিছনে। খানিকটা হেঁটে গিয়ে দেখতে পায় বাকিরা সবাই জুটেছে। শুভঙ্কর নোংরা একটা ইঙ্গিত করে বলে, আসবিনা বলছিলে যে বড়ো চাঁদু ! তুমিই তো লঙ্গেষ্ট টানলে !
চল্। বলেই হনহন করে হেঁটে যায় ঐত্রাস।
পরদিন রাতে, ঐত্রাসের ফ্ল্যাট। ঐত্রাস গ্যাস ওভেন জ্বেলে গরম জল বসায়। চায়ের পাতা দেয়। চিনি দেয়। জল ফুটে লিকার বেরিয়ে লাল হয়ে আসে। একটু গুঁড়ো দুধ দেয়। চামচে খানিকটা গুঁড়ো দুধ নিয়ে মুখে দিয়ে আস্বাদন করতে থাকে কোমলগান্ধার। রোজ রোজ এভাবেই করা অভ্যাস। রোজ এমনি করেই চা করে ও। কলিং বেলের আওয়াজ। কুয়াশা।
বলে, রাগ করেছিস ?
- না।
শান্ত উত্তর দিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে আবার চা ছাঁকায় মনোনিবেশ করে ঐত্রাস। আবার পিছন থেকে কুয়াশা এসে জড়িয়ে ধরে। আবার মেহগনি কাঠের ওপর পেরেক ঠোকার শব্দ। আবার ছাতিমের গন্ধ। আবার পশমের সাথে চেতনার অভেদবোধ। কাপে ঢালা চা ঠান্ডা হয়ে যায়। আর চুমকির ঘরের দরজা বন্ধ। শরীরমর্দনের আওয়াজে ছেয়ে যাওয়া একটা সমস্ত আকাশ। ঐত্রাস দেখতে পায় আকাশ থেকে ইলিশের বৃষ্টি হচ্ছে। চুমকি দেখে আকাশ থেকে ঐত্রাসের বৃষ্টি হচ্ছে। আর কুয়াশা দেখতে পায় পুজোর ছুটিতে বকখালির সমুদ্রতট।
ঘরটা ঘর নয়। ঘরের থেকে বড্ড বেশি ছোটো। মানুষের মাথায় ঠেকে চাল। এত্তো জিনিসে ঠাসা। অনেক চকচকে শাড়ি, ভাঙা আয়না, স্টোভ। গুমোট। অথচ এসব ভালোলাগছিল ঐত্রাসের। কারণ মেয়েটা মোহময়। মেয়েটা অদ্ভুত। নেশার ঘোরে এমনিই এপাড়ায় বেড়াতে এসেছিল ওরা কয়েকজন। ডাক্তার মানুষ। হঠাৎ নেশা, হঠাৎ এই পাড়ায় এসে পড়া। ভাবেনি যে কারো ঘরে এসে ঢুকবে। ওর মতো সম্ভ্রান্ত বাড়ির ছেলের এরকম আচরণ মানায় না। অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। ডাকছিল, যেরকম সাধারণত ডেকে থাকে। শুভঙ্কর একজন কাকিমা গোছের সঙ্গে কোনো একটা ঘরে ঢুকে যাওয়ায় ঘাবড়ে গিয়েছিল সবাই। তারপরে সবাই কারোর না কারোর সাথে ঘরে ঢুকে গেল। ঐত্রাস দেখেছিল এই মেয়েটাকে। অন্য সবার মতো সং সেজে দাঁড়ায়নি সে। স্বাভাবিক সৌন্দর্যের দীপ্তি ছিল চেহারায়। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই যান্ত্রিকভাবে মেয়েটা হাত ধরে নিয়ে এল ঘরে। বারণ করতে ইচ্ছে করেনি ঐত্রাসের।
মিঠে একটা গন্ধ ছিল ঘরটায়। নোংরা বিছানা বালিশ। ঘরে ঢুকে খাটে বসল। স্থির হয়ে। মেয়েটা চাবি দেওয়া যন্ত্রের মতো নিজের গায়ের জামাকাপড় ছেড়ে ফেলে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও তাকিয়ে দেখল মেয়েটার অমলিন নগ্নতাকে। কিন্তু তার শরীর অনেক দাগ, কালসিটে ইত্যাদি। অনেকক্ষণ ওইরকম ভাবেই কেটে যাবার পর মেয়েটা নিজে থেকেই কাছে এগিয়ে আসতে ও বলল, কিছু করতে হবে না। পাশে এসে শুয়ে থাকো। মেয়েটা কথা শুনে বাঁকা হেসে পাশে শুয়ে পড়ল।
আধবসা অবস্থায় ঐত্রাস ভাবছিল, পারছিল না ঠিক ভাবতে। মাথায় ভাবনাগুলো জট পেকে যাচ্ছিল। ভাবছিল এসব কী করছে। তারপর ভাবছিল কিছুই তো করেনি। ভাবছিল কুয়াশা জানতে পারলে রাগ করবে কিনা। ভাবছিল কুয়াশা জানতে পারবে কিনা। ওহ্ ! হঠাৎ মনে পড়ল। পাশে এক নগ্নিকা শয্যাশায়ী। তাকে ও চেনে না। তাতে কি ! এটা ওদের ব্যাবসা। কিন্তু ঐত্রাসের কী ?
জানলা দিয়ে রাস্তার আলো এসে পড়ছিল ঘরের ভিতরটায়। ঐত্রাস সাত পাঁচ না ভেবে শুয়ে পড়ল নগ্নিকার পাশে। জিজ্ঞেস করল, নাম কী ? উত্তর এল, চুমকি। বাজে লাগল নিজের নামটা শুনে। পাশের কোনো ঘর থেকে একটা অস্পষ্ট শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেটা সোহাগের না যাতনার বোঝার উপায় নেই। অনেকক্ষণ একঘেয়ে শব্দ। মেয়েটা নীরবতা ভেঙে প্রশ্ন করল, বউয়ের সাতে ঝগড়া করে এসেচিস ?
- বউ নেই।
- অ! তবে পিরীতের মেয়েছেলের সাতে ঝগড়া।
- চুপ করবে? কি ভাষা বলছ এসব ! মেয়েছেলে আবার কি কথা !
আবার নিস্তব্ধতা। পাশের অস্পষ্ট শব্দটা স্পষ্টতর হতে থাকে। কতগুলো নিকৃষ্ট মানের কথা শোনা যাচ্ছে পরিষ্কার। মেয়েটা বলে, তোদের অনেক পয়সা বল্ ? তাই ওমনি ওমনি এখানে এসেচিস। তুই ভালো বটে। এমনি যা পয়সা দেয় তাতে সরীরটায় কিচু থাকেনে। ঐত্রাস ধমকে বলল, বাজে কথা বোলো না। বলে ভাবল, মেয়েটার কী দোষ। ও এতেই অভ্যস্ত। বলল, তুমি কত টাকা পাও ? উত্তর এল, এমনিতে হাজার। আর খোদ্দের খুসি হয়ে হাতে কিচু দিলে . . .
কেমন গা গুলোচ্ছে। দম আটকে আসছে। নেশা কেটে যাচ্ছে এসব কথা শুনে। কথার মোড় ফেরাবার জন্য ঐত্রাস বলল, তুমি কখনো দেখেছ, আকাশ থেকে ইলিশ মাছ ঝরে পড়ছে ? কুয়াশাকেও এই প্রশ্নটা করেছিল ঐত্রাস। প্রত্যুত্তর এসেছিল, তোর একজন মনোবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া দরকার। মেয়েটাও ওরকমই বলবে। কেউ আকাশ থেকে ইলিশ ঝরতে দেখে না। ঐত্রাসের কী ডাঃ গুপ্তর কাছে একবার যাওয়া উচিৎ ? মেয়েটা এবারে উত্তর দিল, হ্যাঁ। চমকে উঠল ও। বলল, সত্যি বলছ ? মেয়েটা বলে, হুঁ, দেকি তো।ও বলল, আমিও। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে না। তুমি ঠাট্টা করছ না তো ?
-আমি আকাশ থেকে অনেক কিচু ঝরতে দেকেচি। গেলোবার বিস্টিকালে দেকেছিলাম, কত রসোগোল্লা আর খেলামবাটি ঝচ্চে। তা ওই তো খেয়ালে দেকি আর হারায় যায়।
হঠাৎ করেই অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে নিজের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে শুল ঐত্রাস। ভালোলাগছে ওর। ওর মতো মেয়েটা আকাশ থেকে জিনিস ঝরতে দেখে। মেয়েটাও সাহস পেয়ে ওর বুকের কাছে মাথা রাখে। বলে, তুই কি সারারাত গজালি করবি বলে পয়সা দিয়ে ঘরকে এলি ?
- গজালি মানে?
- ই যে ইদিক উদিক কার কতা।
- সবসময় ভালোলাগে ?
- ভালো লাগার সঙ্গে সঙ্ কী রে ? তুই খাওয়াবি নাকি ?
বিরক্ত হয়ে সরে পাশ ফিরে শুল ঐত্রাস। এদের সেই এক গল্প। বিরক্তিকর ! মেয়েটা বলল, সরিস যে বড় !
- আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারব না। বিয়ে টিয়ে করতে পারব না। নেশা কেটে গেলে চলে যাবো। ভুলে যাব। তুমি আমার মতো আকাশ থেকে জিনিস ঝরতে দেখ বললে বলে ভালোলাগল। এর থেকে বেশি কিছু সামর্থ্য নেই আমার।
- তোকে ইসব আমি বলেচি ? যবে থিকে ই কাজ করি কখোনো কেউ ইমনি আসে নাই। তোকে ভাল্লাগছে বলে না তোর সাতে ইমনি পড়ে আচি। সোমোয় অনেক পয়সা দাম দিয়ে কিনে লোকে জানিস ? তুই পয়সা দিয়ে বকচিস তো তাজ্জব লাগচে। তুই ভালো লোক।
- জানি।
- তো ইখানে কেনো এলি ? তোর মেয়েছেলে ঘরে ঢুকতে দেইনি ?
ঐত্রাসের হঠাৎ কুয়াশার মুখটা মনে পড়ল। সেদিন ফ্ল্যাটে পিছন থেকে এসে কুয়াশা ওকে জড়িয়ে ধরেছিল। তারপর রেশমের কাপড় আর ঘামের সিক্ততা। তারপরে কফি আর সিগারেটের গন্ধ। তারপর আর কিছু মনে নেই।
ঐত্রাস বলল, আমার প্রেমিকা আমাকে কতো ভালোবাসে জানো ? কিন্তু মাঝেমাঝে আমাকে বুঝতে পারে না। আমি বোধহয় বোঝার মতো নইও। আমি কবিতা লিখতে পারি না। চাইও না। আমি চাই একদিন আকাশ থেকে ইলিশ মাছ ঝরুক। আর ও আমার মতোই দেখতে পা। ব্যাস।
- পাবে।
- তুমি কী করে জানলে ?
- আমিও তো পাই।
- উহুঁ। তা বটে।
নেশা বেশ অনেকটা কেটে গেছে। শুভঙ্কর হাতে যেখানে ধাক্কা মেরেছিল তার ওপরে চুমকি শুয়ে আছে। ব্যথাটা এতক্ষণ বাদে টের পাচ্ছে ঐত্রাস। চুমকির ভিজে ঠান্ডা পিঠটা ঠেকছে ওর হাতে। ও এবারে উঠে যেতে চায়। এরকম একটা জায়গায় এরকম ভাবে . . .
চুমকি বলে, যা তুই। সোমোয় সেস হোয় গেচে। ইখুনি রঙ্গাদা তোকে বের কোরতে আসবে।
- তোমার ঘরে আবার কেউ আসবে বুঝি।
- এইতো বাজার। আসবেনা কেনে।
- ওহ্ !
পাশের ঘরের কদর্য শরীরমর্দনের শেষের ক্লান্ত গোঙানি শোনা যাচ্ছে। ঐত্রাস চুমকিকে সরিয়ে দেয়। উঠে পড়ে। একটুও নেশা বাকি নেই। আবার অস্বস্তি হয় ওর। বলে, কাপড় পরো।
- পরি। বলে পাতলা ফিনফিনে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নেয় চুমকি। ঘরের দরজাটা খুলতে গিয়ে পিছনে ফিরে একবার ঐত্রাসকে জড়িয়ে ধরে। ঐত্রাসও জড়ায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে, ভালো হোক তোর। দরজা খুলে দিয়ে বল , যা। আর আসিস নি।
ঐত্রাস দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। একবারও তাকায় না পিছনে। খানিকটা হেঁটে গিয়ে দেখতে পায় বাকিরা সবাই জুটেছে। শুভঙ্কর নোংরা একটা ইঙ্গিত করে বলে, আসবিনা বলছিলে যে বড়ো চাঁদু ! তুমিই তো লঙ্গেষ্ট টানলে !
চল্। বলেই হনহন করে হেঁটে যায় ঐত্রাস।
পরদিন রাতে, ঐত্রাসের ফ্ল্যাট। ঐত্রাস গ্যাস ওভেন জ্বেলে গরম জল বসায়। চায়ের পাতা দেয়। চিনি দেয়। জল ফুটে লিকার বেরিয়ে লাল হয়ে আসে। একটু গুঁড়ো দুধ দেয়। চামচে খানিকটা গুঁড়ো দুধ নিয়ে মুখে দিয়ে আস্বাদন করতে থাকে কোমলগান্ধার। রোজ রোজ এভাবেই করা অভ্যাস। রোজ এমনি করেই চা করে ও। কলিং বেলের আওয়াজ। কুয়াশা।
বলে, রাগ করেছিস ?
- না।
শান্ত উত্তর দিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে আবার চা ছাঁকায় মনোনিবেশ করে ঐত্রাস। আবার পিছন থেকে কুয়াশা এসে জড়িয়ে ধরে। আবার মেহগনি কাঠের ওপর পেরেক ঠোকার শব্দ। আবার ছাতিমের গন্ধ। আবার পশমের সাথে চেতনার অভেদবোধ। কাপে ঢালা চা ঠান্ডা হয়ে যায়। আর চুমকির ঘরের দরজা বন্ধ। শরীরমর্দনের আওয়াজে ছেয়ে যাওয়া একটা সমস্ত আকাশ। ঐত্রাস দেখতে পায় আকাশ থেকে ইলিশের বৃষ্টি হচ্ছে। চুমকি দেখে আকাশ থেকে ঐত্রাসের বৃষ্টি হচ্ছে। আর কুয়াশা দেখতে পায় পুজোর ছুটিতে বকখালির সমুদ্রতট।
Soundscapeটা সিনেমার মত...
ReplyDeleteপ্রিজমের মত..
ReplyDeleteBaah
ReplyDeleteBaah
ReplyDeleteগায়ে কাঁটা দিল,অন্যরকমের
ReplyDelete